শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬
হযরত মুসা (আঃ) এর জিবনী। by kader78 on অক্টোবর ২৮, ২০১৪পোস্ট টি ৭,৪২৩ বার পড়া হয়েছে in ধর্মীয় সংবাদ  আসসালামুয়ালাইকুম।সবাই কেমন আছেন।আজকের আলোচনা করবো হযরত মুসা (আ.) কে নিয়ে!! (খ্রিষ্টপূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী) প্রাচীন মিসরের রাজধানী ছিল পেন্টাটিউক। নীল নদের তীরে এই নগরে বাস করতেন মিসরের ‘ফেরাউন’ রামেসিস। নগরের শেষ প্রান্তে ইহুদিদের বসতি। মিসরের ‘ফেরাউন’ ছিলেন ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন। একবার কয়েকজন জ্যোতিষী গণনা করে তাকে বলেছিলেন, ইহুদি পরিবারের মধ্যে এমন এক সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যে ভবিষ্যতে মিসরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। জ্যোতিষীদের কথা শুনে ভীত হয়ে পড়লেন ফ্যারাও। তাই ‘ফেরাউন’ আদেশ দিলেন কোনো ইহুদি পরিবারে সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই যেন তাকে হত্যা করা হয়। ফেরাউনের গুপ্তচররা চতুর্দিকে ঘুরে বেড়াত। যখনই কোনো পরিবারে সন্তান জন্মানোর সংবাদ পেত তখনই গিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করত। ইহুদি মহল্লায় বাস করতেন আসরাম আর জোশিবেদ নামে এক সদ্যবিবাহিত দম্পতি। যথাসময়ে জোশিবেদের একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করল। সন্তান জন্মানোর পরই স্বামী-স্ত্রীর মনে হলো যেমন করেই হোক এই সন্তানকে রক্ষা করতেই হবে। কে বলতে পারে এই সন্তানই হয়তো ইহুদি জাতিকে সমস্ত নির্যাতন থেকে রক্ষা করবে একদিন। সকলের চোখের আড়ালে সম্পূর্ণ গোপনে শিশুসন্তানকে বড় করে তুলতে লাগলেন আসরাম আর জোশিবেদ। কিন্তু বেশিদিন এই সংবাদ গোপন রাখা গেল না। স্বামী-স্ত্রী বুঝতে পারলেন যেকোনো মুহূর্তে ফেরাউনের সৈনিকরা এসে তাদের সন্তানকে তুলে নিয়ে যাবে। ঈশ্বর আর ভাগ্যের হাতে শিশুকে সঁপে দিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়লেন। নীল নদের তীরে এক নির্জন ঘাটে এসে শিশুকে শুইয়ে দিয়ে তারা বাড়ি ফিরে গেলেন। সেই নদীর ঘাটে প্রতিদিন গোসল করতে আসত ‘ফেরাউনের’ কন্যা। ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চাকে একা পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হলো। তাকে তুলে নিয়ে এলো রাজপ্রাসাদে। তারপর সেই শিশুসন্তানকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করে তুলতে লাগল। রাজকন্যা শিশুর নাম রাখল মুসা। এ বিষয়ে আরেকটি কাহিনী প্রচলিত। মুসার মা জোশিবেদ জানতেন প্রতিদিন ফেরাউনের কন্যা সখীদের নিয়ে নদীতে স্নান করতে আসেন। একদিন ঘাটের কাছে পথের ধারে শিশু মুসাকে একটা ঝুড়িতে করে শুইয়ে রেখে দিলেন। নিজে গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর রাজকুমারী সেই পথ দিয়ে স্নান করতে যাওয়ার সময় দেখতে পেল মুসাকে। পথের পাশে ফুটফুটে একটা শিশুকে পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হলো। তাড়াতাড়ি মুসাকে কোলে তুলে নিল। জোশিবেদকেই মুসার ধাত্রী হিসেবে নিয়োগ করে রাজকুমারী। নিজের পরিচয় গোপন করে রাজপ্রাসাদে মুসাকে দেখাশোনা করতে থাকে জোশিবেদ। মা ছাড়া মুসা কোনো নারীর স্তন্যপান করেনি। ধীরে ধীরে কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিলেন মুসা। ফ্যারাওয়ের অত্যাচার বেড়েই চলছিল। ইহুদির ওপর এই অত্যাচার ভালো লাগত না মুসার। পুত্রের মনোভাব জানতে পেরে একদিন জোশিবেদ তার কাছে নিজের প্রকৃত পরিচয় দিলেন। তারপর থেকে মুসার অন্তরে শুরু হলো নিদারুণ যন্ত্রণা। একদিন রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন মুসা। এমন সময় তার চোখে পড়ল এক হতভাগ্য ইহুদিকে নির্মমভাবে প্রহার করছে তার মিসরীয় মনিব। এই দৃশ্য দেখে আর স্থির থাকতে পারলেন না মুসা। তিনি সেই ইহুদিকে উদ্ধার করার জন্য নিজের হাতে তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন মিসরীর মনিবকে। সেই আঘাতে মারা গেল মিসরীয় লোকটি। ইহুদি লোকটি চারদিকে এ কথা প্রকাশ করে দিল। গুপ্তচররা ফেরাউনকে গিয়ে সংবাদ দিতেই ক্রোধে ফেটে পড়লেন ফেরাউন। তিনি বুঝতে পারলেন রাজকন্যা মুসাকে মানুষ করলেও তার শরীরে বইছে ইহুদি রক্ত, তাই নিজের ধর্মের মানুষের ওপর অত্যাচার হতে দেখে মিসরীয়কে হত্যা করেছে। একে যদি মুক্ত রাখা যায় তবে বিপদ অবশ্যম্ভাবী্ল্ল্ল্ল। তখনই সৈনিকদের ডেকে হুকুম দিলেন, যেখান থেকে পার মুসাকে বন্দি করে নিয়ে এসো। ফেরাউনের আদেশের কথা শুনে আর বিলম্ব করলেন না মুসা। তৎক্ষণাৎ নগর ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়লেন। দীর্ঘ পথশ্রমে মুসা ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর চোখে পড়ল দূরে একটি কুয়ো। কুয়োর সামনে সাতটি মেয়ে তাদের ভেড়াকে পানি খাওয়াচ্ছিল। হঠাৎ একদল মেষপালক সেখানে এসে মেয়েদের কাছ থেকে জোর করে ভেড়াগুলোকে কেড়ে নিল। সাথে সাথে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিল সাত বোন। তাদের চিৎকার শুনে ছুটে এলেন মুসা। তারপর মেষপালকদের কাছ থেকে সব কটা ভেড়া উদ্ধার করে মেয়েদের ফিরিয়ে দিলেন। মেয়েরা তাঁকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ি ফিরে গেল। সাত বোনের বাবার নাম ছিল রুয়েন। সাত বোন এসে মুসাকে ডেকে নিয়ে গেল তাদের বাড়িতে। তাঁর পরনের মূল্যবান পোশাক, সমভ্রমপূর্ণ ব্যবহার দেখে সকলেই মুগ্ধ হয়ে গেল। রুয়েন তার পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই কোনো কথা গোপন করলেন না মুসা। অকপটে নিজের পরিচয় দিলেন। রুয়েন মুসার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিল। অল্প কিছুদিন পর এক মেয়ের সাথে তাঁর বিয়ে দিলেন রুয়েন। সেই যাযাবর গোষ্ঠীর সাথে থাকতে থাকতে অল্প দিনেই মেষ চরানোর কাজ শিখে নিলেন মুসা। এক নতুন পরিবেশের সাথে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে মানিয়ে নিলেন। দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। ওদিকে মিসরের ইহুদিনের অবস্থা ক্রমশই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। মিডিয়াতে পশুপালকের জীবন যাপন করলেও স্বজাতির কথা ভুলতে পারেননি মুসা। মাঝে মাঝেই তার সমস্ত অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠত। একদিন মেষের পাল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে নির্জন পাহাড়ের প্রান্তে এসে পৌঁছলেন মুসা। সামনেই বেশ কিছু গাছপালা। হঠাৎ মুসা দেখলেন সেই গাছপালা পাহাড়ের মধ্যে থেকে এক আলোকছটা বেরিয়ে এলো। এত তীব্র সেই আলো, মনে হলো দু চোখ যেন ঝলসে যাচ্ছে। তবুও স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন সেই আলোর দিকে। তার মনে হলো ওই আলো যেন তাঁকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে। এক সময় শুনতে পেলেন সেই আলোর মধ্য থেকে এক অলৌকিক কণ্ঠস্বর ভেসে এলোঃ মুসা মুসা। চমকে উঠলেন মুসা। কেউ তাঁরই নাম ধরে ডাকছে। তৎক্ষণাৎ সাড়া দিলেন, কে আপনি আমায় ডাকছেন? সেই অলৌকিক কণ্ঠস্বর বলে উঠল, আমি তোমার ও তোমার পূর্বপুরুষদের একমাত্র ঈশ্বর। ঈশ্বর তাঁর সাথে কথা বলছেন, এ যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মুসা। ভীত হয়ে মাটিতে নতজানু হয়ে বসে পড়লেন। আমার কাছে আপনার কী প্রয়োজন প্রভু? দৈব কণ্ঠস্বর বলল, তুমি আমার প্রতিনিধি হিসেবে মিসরে যাও। সেখানে ইহুদিরা অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করছে। তুমি ইহুদিদের মুক্ত করে নতুন দেশে নিয়ে যাবে। মুসা বললেন, আমি কেমন করে তাদের মুক্তি দেব? দৈববাণী বলল, আমি অদৃশ্যভাবে তোমাকে সাহায্য করব। তুমি ফ্যারাওয়ের কাছে গিয়ে বলবে, আমিই তোমাকে প্রেরণ করেছি। সকলেই যেন তোমার আদেশ মেনে চলে। মুসা বললেন, কিন্তু যখন তারা জিজ্ঞেস করবে ঈশ্বরের নাম, তখন কী জবাব দেব? প্রথমে ঈশ্বর তাঁর নাম প্রকাশ না করলেও পরে বললেন তিনিই এই বিশ্বজগতের স্রষ্টা আল্লাহ। মুসা অনুভব করলেন তাঁর নিজের শক্তিতে নয়, ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তিতেই তাঁকে সমস্ত কাজ সমাধান করতে হবে। এত দিন ঈশ্বর সম্বন্ধে তাঁর কোনো সপষ্ট ধারণা ছিল না। এই প্রথম অনুভব করলেন ঈশ্বর-নির্দিষ্ট কাজের জন্যই তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। আর আল্লাহ তাঁর একমাত্র ঈশ্বর। এর কয়েক দিন পর দ্বিতীয়বার ঈশ্বরের আদেশ পেলেন মুসা। তিনি পুনরায় আবির্ভূত হলেন মুসার সামনে। তারপর বললেন, তোমার ওপর আমি প্রসন্ন হয়েছি। একমাত্র তুমিই পারবে ইহুদি জাতিকে এই সংকট থেকে উদ্ধার করতে। আর বিলম্ব করো না, যত শিগগির সম্ভব রওনা হও মিসরে। অল্প কয়েক দিন পর স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিসরের পথে যাত্রা করলেন মুসা। যথাসময়ে মিসরে গিয়ে পৌছালেন মুসা। গিয়ে দেখলেন সত্যি সত্যিই ইহুদিরা অবর্ণনীয় দুরবস্থার মধ্যে বাস ক্ল্লরছে। মুসা প্রথমেই সাক্ষাৎ করলেন ইহুদিনের প্রধান নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে। তাদের সকলকে বললেন ঈশ্বরের আদেশের কথা। মুসার আচার-আচরণ, তাঁর ব্যক্তিত্ব, আন্তরিক ব্যবহার, গভীর আত্মপ্রত্যয় দেখে সকলেই তাঁকে বিশ্বাস করল। মুসা বললেন, আমরা ফেরাউনের কাছে গিয়ে দেশত্যাগ করার অনুমতি প্রার্থনা করব। মুসা তার ভাই অ্যারন ও কয়েকজন ইহুদি নেতাকে সাথে নিয়ে গিয়ে হাজির হলেন ফেরাউনের দরবারে। মুসা জানতেন সরাসরি দেশত্যাগের অনুমতি চাইলে কখনোই ফ্যারাও সেই অনুমতি দেবেন না। তাই তিনি বললেন, সম্রাট, আমাদের স্রষ্টা আদেশ দিয়েছেন সমস্ত ইহুদিকে মিডিয়ার মরুপ্রান্তরে এক পাহাড়ে গিয়ে প্রার্থনা করতে। আপনি যদি কয়েক দিনের জন্য সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেন। ফেরাউন মুসার অনুরোধে সাড়া দিলেন না। ত্রুদ্ধ স্বরে বলে উঠলেন, তোমাদের আল্লাহর আদেশ আমি মানি না। তোমরা মিসর ত্যাগ করে কোথাও যেতে পারবে না। মুসা বললেন, আমরা যদি মরুভূমিতে গিয়ে প্রার্থনা না করি তবে তিনি আমাদের ওপর ক্রুদ্ধ হবেন। হয়তো আমাদের সকলকেই ধ্বংস করে ফেলবেন। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলেন মুসা। কী করবেন কিছুই ভাবতে পারছিলেন না। শেষে নিরুপায় হয়ে আল্লাহর কাছে আকুল হয়ে প্রার্থনা করলেন। তার প্রার্থনায় সাড়া দিলেন আল্লাহ। তিনি মুসাকে বললেন, তোমার ভাই অ্যারনকে বল, সে যেন নদী, জলাশয়, পুকুর ঝর্ণায় গিয়ে তার জাদুদণ্ড স্পর্শ করে, তাহলেই দেখবে সমস্ত পানি রক্ত হয়ে গেছে। আল্লাহর নির্দেশে অ্যারন মিসরের সমস্ত পানীয় জলকে রক্তে রূপান্তরিত করে ফেলল। ফ্যারাও আদেশ দিলেন মাটি খুঁড়ে পানি বের করতে। সৈনিকরা অসংখ্য কূপ খুঁড়ে ফেলল। সকলে সেই জল পান করতে আরম্ভ করল। অ্যারনের জাদু বিফল হতেই মুসা পুনরায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। এবার মিসর জুড়ে ব্যাঙের মহামারী দেখা গেল। তার পচা গন্ধে লোকের প্রাণান্ত অবস্থা। কেউ আর ঘরে থাকতে পারে না। সকলে গিয়ে ফেরাউনের কাছে নালিশ জানাল। নিরুপায় হয়ে ফেরাউন ডেকে পাঠালেন মুসাকে। বললেন, তুমি ব্যাঙের মড়ক বন্ধ কর। আমি তোমাদের মরুভূমিতে গিয়ে প্রার্থনা করার অনুমতি দেব। মুসার ইচ্ছায় ব্যাঙের মড়ক বন্ধ হলেও ফ্যারাও নানা অজুহাতে ইহুদিদের যাওয়ার অনুমতি দিলেন না। নিরুপায় হয়ে মুসা আবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। ফ্যারাওয়ের আচরণে এবার ভয়ঙ্কর ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন আল্লাহ। সমস্ত মিসর জুড়ে শুরু হলো ঝড়-ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি, মহামারী। তবুও ফেরাউন অনুমতি দিতে চায় না। এবার আল্লাহ নির্মম অস্ত্র প্রয়োগ করলেন। হঠাৎ সমস্ত মিসরীর প্রথম পুত্রসন্তান মারা পড়ল। দেশজুড়ে শুরু হলো হাহাকার। সমস্ত মিসরীয় দলবদ্ধভাবে গিয়ে ফেরাউনের কাছে দাবি জানাল, ইহুদিদের দেশ ছাড়ার অনুমতি দিন, না হলে আরো কী গুরুতর সর্বনাশ হবে কে জানে। ভয় পেয়ে গেলেন ফ্যারাও। ফেরাউন মুসাকে ডেকে বললেন, প্রার্থনা করার জন্য তোমাদের মরুভূমিতে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি। যদি মনে কর, তোমাদের যা কিছু আছে, গৃহপালিত গবাদি পশু, জীবজন্তু, জিনিসপত্র, সব সাথে নিয়ে যেতে পার। দেশত্যাগের অনুমতি পেয়ে ইহুদিরা সকলেই উল্লসিত হয়ে উঠল। তারা সকলেই মুসাকে তাদের নেতা বলে স্বীকার করে নিল। মিসর ছাড়াও মাকুম নগরেও বহু ইহুদি বাস করত। সকলে দলবদ্ধভাবে মুসাকে অনুসরণ করল। মুসা জানতেন আল্লাহর শাস্তির ভয়ে ফ্যারাও দেশত্যাগের অনুমতি দিলেও তিনি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবেন যাতে তাদের যাত্রাপথে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। তাই যথাসম্ভব সতর্কভাবে পথ চলতে লাগলেন। কয়েক দিন চলার পর তারা সকলে এসে পড়ল লোহিত সাগরের তীরে। এদিকে ইহুদিরা মিসর ত্যাগ করতেই ফেরাউনের মনের পরিবর্তন ঘটল। যেমন করেই হোক তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসে আবার ক্রীতদাসে পরিণত করতে হবে। তৎক্ষণাৎ ইহুদিদের বন্দি করার জন্য বিশাল এক সৈন্যবাহিনীকে পাঠালেন ফেরাউন। এদিকে দূর থেকে মিসরীয় সৈন্যদের দেখতে পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল সমস্ত ইহুদি। সামান্যতম বিচলিত হলেন না মুসা। প্রার্থনায় বসলেন মুসা। প্রার্থনা শেষ হতেই দৈববাণী হলো, মুসা, তোমার হাতের দণ্ড তুলে সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে যাবে। সমুদ্রের পানি তোমাদের স্পর্শ করবে না। মুসা তাঁর হাতের দণ্ড তুলে সমুদ্রের সামনে এসে দাঁড়াতেই সমুদ্র দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল। তার মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে প্রশস্ত পথ। সকলের আগে মুসা, তার পেছনে সমস্ত ইহুদি নারী-পুরুষের দল সেই পথ ধরে এগিয়ে চলল। তারা কিছুদূর যেতেই মিসরীয় সৈন্যরা এসে পড়ল সমুদ্রের তীরে। ইহুদিদের সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে যেতে দেখে তারাও তাদের অনুসরণ করে সেই পথ ধরে এগিয়ে চলল। সমস্ত মিসরীয় বাহিনী সমুদ্রের মধ্যে নেমে আসতেই আল্লাহর নির্দেশ শুনতে পেলেন মুসা, তোমার হাতের দণ্ড পেছন ফিরে নামিয়ে দাও। মুসা তাঁর হাতের দণ্ড নিচু করতেই সমুদ্রের জলরাশি এসে আছড়ে পড়ল মিসরীয় সৈন্যদের ওপর। মুহূর্তে বিশাল সৈন্যবাহিনী সমুদ্রের অতল গহরে হারিয়ে গেল। ইহুদিরা নিরাপদে তীরে গিয়ে উঠল। মুসা সকলকে নিয়ে এগিয়ে চললেন। সামনে বিশাল মরুভূমি। সামান্য পথ অতিক্রম করতেই তাদের সঞ্চিত পানি, খাবার ফুরিয়ে গেল। মরুভূমির বুকে কোথাও পানির চিহ্নমাত্র নেই। ক্রমশই সকলে তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ছিল। অনেকে আর অগ্রসর হতে চাইছিল না। মুসা বিচলিত হয়ে পড়লেন, এতগুলো মানুষকে কোথা থেকে তৃষ্ণার পানি দেবেন। কিছুদূর যেতেই এক জায়গায় পানি পাওয়া গেল। এত দুর্গন্ধ সেই পানি, কার সাধ্য তা মুখে দেয়। প্রার্থনায় বসলেন মুসা। প্রার্থনা শেষ করে আল্লাহর নির্দেশে কিছু গাছের পাতা ফেলে দিলেন সেই পানির মধ্যে। সাথে সাথে সেই পানি সুস্বাদু পানীয় হয়ে উঠল। সকলে তৃষ্ণা মিটিয়ে সব পাত্র ভরে নিল। যারা মুসাকে দোষারোপ করছিল, তারা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাইল। সকলে মুসাকে তাদের ধর্মগুরু ও নেতা হিসেবে স্বীকার করে নিল। সকলে তাঁর নির্দেশমতো এগিয়ে চলল। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত খাবার ফুরিয়ে গেল। আশপাশে কোথাও কোনো খাবারের সন্ধান পাওয়া গেল না। খিদের তাড়নায় সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। আবার তারা দোষারোপ করতে আরম্ভ করল মুসাকে। তোমার জন্যই আমাদের এত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। মুসা সকলকে শান্ত করে বললেন, তোমরা ভুলে গিয়েছ আমাদের ঈশ্বর আল্লাহর কথা। তিনি ফেরাউনকে তোমাদের দেশত্যাগের অনুমতি দিতে বাধ্য করেছেন। তিনি সমুদ্রকে দ্বিধাবিভক্ত করেছেন, সৈন্যদের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। তোমাদের পানির ব্যবস্থা করেছেন। তবুও তোমরা তাঁর শক্তিতে সন্দেহ প্রকাশ করছে। মুসার কথা শেষ হতেই কোথা থেকে সেখানে উড়ে আসে অসংখ্য পাখির ঝাঁক। ইহুদিরা ইচ্ছামতো পাখি মেরে মাংস খায়। আর কারো মনে কোনো সংশয় থাকে না। মুসাই তাদের অবিসংবাদিত নেতা। সকলে শপথ করে জীবনে মরণে তারা মুসার সমস্ত আদেশ মেনে চলবে। মুসা সমস্ত ইহুদিকে নিয়ে এলেন এফিডিম নামে এক নির্জন প্রান্তে। চারদিকে ধু ধু বালি, মাঝে মাঝে ছোট পাহাড়, কোথাও পানির কোনো উৎস নেই। মুসা আবার এগিয়ে চললেন। কিছুদূর গিয়ে একটা বড় পাহাড়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন। আল্লাহর নির্দেশে একটা পাথর সরাতেই বেরিয়ে এলো স্বচ্ছ পানির এক ঝর্ণাধারা। সেই পানিতে সকলের তৃষ্ণা মিটল। মুসা যেখানে এসেছিলেন তার অদূরেই প্যালেস্টাইনে তখন বাস করত আমালেক নামে এক উপজাতি সম্প্রদায়। নতুন একদল মানুষকে তাদের অঞ্চলে প্রবেশ করতে দেখে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো। অপরদিকে ইহুদিরা দীর্ঘ পথশ্রমে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অবসন্ন, সকলে মুসাকে বলল, এই যুদ্ধে আমাদের নিশ্চিত পরাজয় হবে। তুমি অন্য কোথাও আশ্রয়ের সন্ধানে চল। মুসা সকলকে সাহস দিয়ে তাঁর দলের সমস্ত পুরুষদের একত্র করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলেন। যুদ্ধ পরিচালনার ভার দেয়া হলো জোশুয়া নামে এক সাহসী যুবককে। শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। মুসা নিজে যুদ্ধে যোগ দিলেন। আল্লাহর নির্দেশে পাহাড়ের ওপর উঠে তার হাতের দণ্ড আকাশের দিকে তুলে ধরলেন। যুদ্ধের প্রথমে আমালেকরা ইহুদিদের বিপর্যস্ত করছিল। কিন্তু মুসা তাঁর দণ্ড ঊর্ধ্বাকাশে তুলে ধরতেই যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হলো। ইহুদিরা বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমালেকদের ওপর। ইহুদিদের সেই প্রচণ্ড বিক্রম সহ্য করতে পারল না আমালেকরা। বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত হয়ে তারা পালিয়ে গেল। ইহুদিরা নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলল প্যালেস্টাইনের দিকে। পথে সিনাই পর্বত। এখানে পানি ও গাছপালার কোনো অভাব নেই দেখে মুসা সেখানেই সকলকে তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন। সেই সময় মুসার শ্বশুর জেথ্রো তার স্ত্রী, দুই পুত্র, সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে সেই পথ ধরে যাচ্ছিল। কাছে আসতেই বুঝতে পারলেন এরা দেশত্যাগী ইহুদি জাতি। তার জামাইয়ের নেতৃত্বে এখানে বসতি স্থাপন করেছে। জেথ্রো ছিলেন উপজাতি সম্প্রদায়ের পুরোহিত। নানা দেশদেবীর পূজা করতেন তিনি। মুসাকে বললেন, তোমাদের আল্লাহর কথা শুনে উপলব্ধি করতে পেরেছি, তিনি সকল দেবতার ঊর্ধ্বে, তিনিই সমস্ত শক্তির উৎস। এত দিন আমি ভুল পথে চালিত হয়েছি। যেসব দেবতাকে পূজা-অর্চনা করেছি তারা কেউই আল্লাহর সমকক্ষ নন। আমি তার ইবাদত করতে চাই। মুসা ইহুদিদের মধ্যে থেকে সৎ ন্যায়বান জ্ঞানী মানুষদের বিচারক হিসাবে নিযুক্ত করলেন। এই সময় মুসা একদিন গভীর রাতে আল্লাহর দৈববাণী শুনতে পেলেন মুসা ঃ আমি আমার এক দূতকে তোমাদের কাছে পাঠাব। তোমরা সকলে তাঁকে অনুসরণ করবে। যে পথে তোমরা যাবে সেই পথে নানা বাধা আসবে। শত্রুরা তোমাদের যাত্রাপথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। কিন্তু আমার আশীর্বাদে তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তুমি বীরদর্পে এগিয়ে যাবে। পথে অন্য কোনো দেবতার মূর্তি বিগ্রহ মন্দির দেখলেই তা ধ্বংস করবে। আর সর্বত্র আমার উপদেশ প্রচার করবে। যারা মূর্তি পূজা করবে তারা আমার শত্রু, তুমি তাদের ধ্বংস করবে। পরদিন মুসা ইহুদিদের সকলকে ডেকে বললেন তোমরা সকলে আগামী দুদিন শুদ্ধ পবিত্রভাবে থাকবে। তৃতীয় দিন দেবদূতের আবির্ভাব হবে। তখন আমরা তাঁকে অনুসরণ করব। দুদিন কেটে গেল। তৃতীয় দিন ভোর থেকেই ঘন মেঘে আকাশ ছেয়ে গেল। তারই সাথে ঘনঘন বিদ্যুতের চমক, বজ্রের নির্ঘোষ। হঠাৎ ঘন মেঘপুঞ্জের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো এক তীব্র আলোকচ্ছটা। তার আলোয় সব অন্ধকার কেটে গেল। দেখা গেল একট টুকরো ভাসমান মেঘ আকাশ থেকে নেমে এলো সিনাই পর্বতের মাথায়। এক মেঘ থেকে সাদা ধোঁয়ার কুন্ডলী বের হয়ে পাহাড়ের সমস্ত চূড়াকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। এমন সময় সেই মেঘপুঞ্জ থেকে অলৌকিক কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, মুসা, তুমি পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এসো। পাহাড়ের চূড়ায় উঠতেই মুসা শুনতে পেলেন আল্লাহর কণ্ঠস্বর, হে আমার প্রিয় ভক্ত, আমি তোমার মাধ্যমে সমস্ত ইহুদিদের দশটি নিয়ম জানাতে চাই। শুধু আমাকে মানলেই চলবে না। এই দশটি নিয়ম তোমাদের সকলকে মেনে চলতে হবে। আল্লাহ তখন মুসার কানে কানে দশটি নির্দেশ দিলেন। এদের বলে টেন কমান্ডমেন্টস। মুসাকে আরো কিছু নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর অদৃশ্য কণ্ঠস্বর বাতাসে মিলিয়ে গেল। ঝরে গেল সেই আলোকরশ্মি মেঘপুঞ্জ। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলো। নিয়ম দশটি নিচে দেয়া হলো- ১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ঈশ্বর নেই। তোমরা আল্লাহ ছাড়া অপর কোনো দেবতার ইবাদত করবে না। ২. আল্লাহকে শুধু উপাস্য হিসেবে মান্য করলেই হবে না। তাঁর প্রতিটি নির্দেশ আদেশ মেনে চলতে হবে। ৩. সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করবে। সপ্তম দিন কোনো কাজ করবে না। এই দিন স্যবাথ বা পবিত্র বিশ্রামের দিন। ৪. পিতামাতাকে ভক্তি করবে, শ্রদ্ধা করবে, তাঁদের প্রতি পালনীয় কর্তব্য অবশ্যই পালন করবে। ৫. কোনো মানুষকে হত্যা করো না। ৬. কোনো নারী বা পুরুষ কখনোই ব্যভিচার করবে না। ৭. অপরের দ্রব্য অপহরণ করবে না। ৮. মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না। ৯. অন্য জিনিসের প্রতি কোনো লোভ করবে না বা যাতে অন্যের অধিকার আছে তা গ্রহণ করবে না। ১০. উপাসনাস্থলে বেদী নির্মাণ করে পশুবলি দিতে হবে। পাথর স্থাপন করা হলো পাহাড়ের গায়ে। যাতে ইহুদিদের ভবিষ্যৎ বংশধররা জানতে পারে ঈশ্বরের আদেশের কথা। এবার মুসা ঈশ্বরের ধ্যান করার জন্য পাহাড়ের চূড়ায় উঠে গেলেন। দীর্ঘ চল্লিশ দিন ধরে গবির সাধনায় মগ্ন হয়ে রইলেন মুসা। এদিকে মুসার অনুপস্থিতিতে সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়ল। সকলে এসে ধরল মুসার ভাই অ্যারনকে। সে ভুলে গেল টেন কম্যান্ডমেন্টসের নির্দেশ। সে একটি সোনার বাছুর তৈরি করে বলল, এই বাছুরটিকেই আল্লাহর প্রতীক বলে পূজা কর। তারপর একে বলি দিয়ে পূজা শেষ করব। সকলে বাছুর পূজার আনন্দে মেতে উঠল। ইহুদিদের এই মূর্তিপূজা দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন আল্লাহ। তিনি মুসাকে বললেন, ওদের এই গর্হিত কাজের জন্য আমি সকলকে ধ্বংস করব। সৃষ্টি করব নতুন এক জাতি। মুসা বুঝতে পারলেন আল্লাহ ইহুদিদের অন্যায় আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তিনি নতজানু হয়ে বসে বললেন, হে প্রভু, তুমি তোমার সন্তানদের এই অপরাধ মার্জনা কর। মুসার কথায় শান্ত হলেন আল্লাহ। তিনি তাঁর উপদেশ-নির্দেশ লেখা আরো দুটি পাথর দিলেন। মুসা সেই পাথর দুটি নিয়ে পাহাড় থেকে নিচে নামতেই দেখতে পেলেন সোনার বাছুর মূর্তিকে ঘিরে ইহুদিরা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে। ইহুদিদের এই অসংযমী ধর্মবিরুদ্ধ আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন মুসা। তাই তিনি ক্রুদ্ধ স্বরে গর্জন করে উঠলেন, তোমরা এই নাচ ও পূজা উৎসব বন্ধ কর। ইহুদিরা কোনো দিন মুসার এই ক্রুদ্ধ মূর্তি দেখেনি। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। মুসা বললেন, তোমরা যারা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করে আমার সঙ্গী হতে চাও তারা আমার ডানদিকে এসে দাঁড়াও। যারা আল্লাহর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করতে না চাও তারা সকলে বাঁ দিকে যাও। ইহুদিরা সকলেই মুসার ডান দিকে এসে দাঁড়াল। মুসা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, তোমরা যে অন্যায় করেছ তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। মুসা বললেন, প্রত্যেক পরিবারের একজন তরবারি নিয়ে এগিয়ে এসো। সকলে তরবারি নিয়ে আসতেই মুসা বললেন, এই তরবারি দিয়ে তোমাদের যে কোনো একজন ভাই, বন্ধু কিংবা প্রিয়জনকে হত্যা করব। এ আমার নির্দেশ নয়, আল্লাহর আদেশ। সকলেই নতমস্তকে সেই আদেশ মেনে নিল। মুসা আর ইহুদিদের সাথে একত্রে বাস করতেন না। তিনি আলাদা তাঁবুতে থাকতেন। দিনরাত আল্লাহর ধ্যানেই মগ্ন হয়ে থাকতেন। মাঝে শুধু আল্লাহর নির্দেশগুলো প্রচার করতেন। দশটি অনুশাসন ছাড়াও এগুলো ছিল স্বতন্ত্র নির্দেশ। ১. বিদেশীদের স্বজাতির মানুষদের মতোই ভালোবাসবে। ২. কেনাবেচার সময় ব্যবসায়ীরা যেন ওজনে কারচুপি না করে, সঠিক দাম নেয়। ৩. অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করা চলবে না। ৪. মূর্তিপূজা, জাদুবিদ্যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহর নির্দেশে সকলে প্যালেস্টাইনে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হলো। তিন দিন চলার পর তারা এসে পড়ল ক্যানান নগরের প্রান্তে। এখানেই শিবির স্থাপন করা হলো। মুসা ইহুদিদের মধ্যে থেকে বারোজন অভিজ্ঞ মানুষকে পাঠালেন প্যালেস্টাইনে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তর পরিদর্শন করে এসে জানাল প্যালেস্টাইনের দক্ষিণ দিকটাই সবচেয়ে সমৃদ্ধ অঞ্চল। মুসা বললেন, আমরা প্যালেস্টাইনের দক্ষিণেই বসতি স্থাপন করব, তোমরা সকলে এগিয়ে চল। প্যালেস্টাইনের সীমান্ত প্রদেশে তখন বাস করত আমালেকিত ও কানানিত নামে দুটি উপজাতি। এই দুই উপজাতি বহুদিন ধরেই প্যালেস্টাইনে বাস করছিল। দুই উপজাতির মানুষরা এক সঙ্গে ইহুদিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আচমকা এই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না ইহুদিরা। তারা আত্মরক্ষার জন্য পালিয়ে গেল হর্মা নামে এক নির্জন প্রান্তরে। মুসা বুঝতে পারলেন প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করতে গেলে অন্য পথ দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। তারা এসে পড়লেন ক্যানানিতে রাজ্যের প্রান্তে। অপরিচিত ইহুদিদের দেখেই ক্যানানিতে রাজা তাদের আক্রমণ করলেন। এবার আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ইহুদিরা। মুসার বুদ্ধি-কৌশলে তারা পরাজিত হলো। অবশেষে তারা এসে পড়লেন জর্ডান নদীর তীরে। নদীর ওপারে মোয়াবের রাজ্য। সেই রাজ্য পার হলেই প্যালেস্টাইন। জর্ডানের তীরে এক উঁচু পাহাড়ের ওপর উঠলেই দেখা যায় প্যালেস্টইনের সবুজ প্রান্তর। এদিকে মুসাও উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠেছিলেন প্যালেস্টাইনের মাটিতে পা দেয়ার জন্য। এমন সময় আল্লাহর দৈববাণী শুনতে পেলেন। হে আমার প্রিয় ভক্ত, তোমার পৃথিবী ছাড়ার সময় হয়েছে, তুমি প্রস্তুত হও। পরদিনই সমস্ত ইহুদিকে ডেকে আল্লাহর আদেশের কথা বলরেন। সকলের সামনে সমস্ত দায়িত্বভার ত্যাগ করে জোশুয়ার ওপর অর্পণ করলেন। সকলকে উপদেশ দিয়ে তিনি প্রার্থনায় বসলেন। বুঝতে পারলেন তাঁর সময় শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ১২০ বছর ধরে পৃথিবীর কত কিছুই তো প্রত্যক্ষ করলেন। গত চল্লিশ বছর মেষপালক যেমন তার মেষের পালকে চালিয়ে নিয়ে বেড়ায়, তিনি তেমনি সমগ্র ইহুদি জাতিকে মিসর থেকে নিয়ে এসেছেন প্যালেস্টাইনের প্রান্তরে। জীবনে কোনো দিন সুখভোগ করেননি। বিলাসিতা করেননি। ধর্মের পথে সৎ সরল জীবন-যাপন করেছেন। প্রতিমূহূর্তে নিপীড়িত ইহুদি জাতির প্রতি নিজের অন্তরের অকুণ্ঠ ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তাদের নানা বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। এত দিনে তাঁর সব কাজ শেষ হলো।  *****লেখাটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ!*****
বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৬
Donald Trump is the most powerful man in the world — here are two scenarios for how that plays out Business Insider: Politics Business Insider: Politics 31 minutes ago Putin will annex the Crimea? He wouldn't dare. Erdogan will introduce the death penalty? He won’t go that far. Kaczynski will paralyze the Polish Constitutional Court? He can’t do that. The British will vote for Brexit? They wouldn’t do that. Trump will become president? Never. It is in the nature of centrist societies to assume the moderate status quo is stable and disruption through extremes is not possible. This is why they are often surprised by the predictable and obvious. Now the predictable and obvious, but hitherto unspeakable, has happened. Donald Trump will become President of the United States of America. He governs the largest and most important country of the free west. He is the most powerful man in the world. What next? There are two scenarios. The less likely scenario Let us turn our attention first to the less likely. As exaggerated as it was to celebrate Obama after his election as a messiah who would bring world peace, it is equally exaggerated to damn Trump. Everything will become better than expected. Trump will develop respect for the office. He will use the highly professional structures of the White House. The experience of the advisors. And the intelligence of several of his supporters. Chris Christie was one of the first to endorse Trump. He is clever and represents the liberal side of the Republican Party as Governor of New Jersey. A real political professional and moderate with it. In Peter Thiel (digital nerd, chess genius), he has one of the most successful investors in Silicon Valley at his side. And even a Henry Kissinger, not without underlying sympathy for Trump, will certainly not withhold his wordly wisdom with regard to foreign policy. Donald Trump, the poltergeist, starts his term of office in the freezing zone of expectation. Every piece of nonsense that he doesn’t carry out, is already a positive surprise which will allow the capital markets to react positively. And in spite of the combined hatred of the global community of do-gooders, he demonstrates within a year or two that he is a sheep in wolf's clothing. The US economy flourishes. America’s foreign policy is resolute but not more unpredictable, the transatlantic alliance holds, and the dictatorships in the world have somewhat more respect for America again. This is the best case. Conceivable. But probable? The worst case scenario Due to his disturbed narcissistic personality, Donald Trump does not develop any respect for the office. He regards and runs the Oval Office like the hub of a real estate empire. Those presenting concerns are discredited as wimps, those who contradict are thrown out. He can govern comfortably with a solid Republican majority both in Congress and the Senate. There are hardly any correctives. A deep contempt for the institutions and for the compromise-base d mechanisms of democracy will change the political style and the substance of American liberty. The biggest risk proves to be Trump’s tone-deafness to the rule of law. Plain common sense – as in the worst tradition under Nixon – is placed over and above rights and the law. Buddy-like alliances arise with other strongmen, who don’t take the frippery of democracy so seriously. A man-to-man friendship develops with Putin. Hooks thrown in foreign policy escalate the conflicts in the Middle East. The problem is the accumulation of risk factors: the culture war of Islamism and the campaign of IS terror, the geopolitics of Russia, China, the debt crisis, the weakness and dysfunctionality of the EU. Every single problem could be solved. Trump’s erratic behavior however provokes a domino effect. The American economy erodes, Wall Street experiences panic and the flight of capital. Draghi's ECB policy collapses. Unemployment and a coup atmosphere also reach Europe. The world wobbles. Inconceivable? But not impossible. Why the election of Donald Trump was predictable and obvious 1. Because we, the media, failed. Trump was – often and by many, but naturally not all, we do not of course want to generalize – combated as in a campaign, but not really presented as clever. In the struggle for a good cause, fairness fell by the wayside. The concerns of the people, who were so alienated by the political establishment that they sought refuge with Trump, were not taken seriously, but ridiculed. Public insults and contempt for voters reigned on the galleries of the good taste of published opinion, instead of understanding and empathy. This is coming back to haunt them. People see through it and they don't like it. And the fact that Trump was always only and consistently photographed and portrayed as a monstrosity, as a clown, has in the end done him more good than harm. 2. Trump was the direct result of extremely weak government by Barack Obama and for a time also Hillary Clinton. America shifted massively to the left under Obama on the domestic front. And drifted into the margins on foreign policy. Obama’s weakness, the lack of diplomatic back channels, were what created the Putin of today. Actions and their results in Syria and in the entire Middle East were similarly disastrous. The lack of orientation in foreign policy has left a weak impression of America. Through his lack of success in domestic policy however, Obama has first and foremost created a sense of abandonment within American society. An unaffordable health insurance system, whose contributions have increased by 25%, with the three most well-known insurers distancing themselves. No reform of immigration law, of energy and climate policy or arms legislation. In place of this: brutal race conflicts, white police violence. And an ideological split in the United States. Obama created a vacuum that Trump was able to fill with vague promises. 3. Hillary Clinton was simply not convincing. � 4. Michael Bloomberg should have seen the misery coming and stood. Under these circumstances Bloomberg could have won and become an excellent President. �But could have doesn’t help. It is too late. What is important now is the view ahead. The election of Donald Trump is the greatest challenge to our system and the western values of freedom, democracy, the rule of law and human rights. Now we will see how powerful the self-regulatory mechanisms of modern free societies really are. Which is stronger? Civil society, whose vision is to bring forth the best from every person? Or the man who appears to want to turn precisely this civil society on its head? Who will win? The madman or the scales of the rule of law? Do the scales have a chance against rudeness? 1000 kilos of cotton weigh just as much as a tonne of lead. The experiment on the open heart of democracy has begun. Europe is poorly equipped for this practical test of the free west. It needs strong leadership. Where are the populists of the middle ground? The charismatic propagandists of humility before the rule of law? The sympathetic evangelists of freedom, tolerance and open society? Opportunistic focusing on details as part of the party geographical pork-barrel politics drives people to despair and to the extreme margins. If politics does only what seems politically achievable at the moment, but too rarely what is simply right, if it says too often what is politically correct, but rarely what is simply true, then it loses followers. Perhaps in this sense, the election of Donald Trump is a salutary shock. And in fact a turning point for the better. Everything is possible. A dramatic renewal of centrist political leadership. Or, in Germany for example, the right-wing populist AFD becoming the strongest party within five years. The Germans won’t do that? Let’s hope not. Mathias Döpfner is CEO of Axel Springer. Disclosure: Axel Springer is Business Insider's parent company. This is an editorial. The opinions and conclusions expressed above are those of the author. Report a problem
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)